রবিবার ২০ এপ্রিল ২০২৫

সম্পূর্ণ খবর

Nephrologist of Manipal Hospital doctor Vishwanath S talks about kidney diseases in World Kidney Day

স্বাস্থ্য | গণপদত্যাগ: যখন কিডনি বলে "আমি আর কাজ করব না!" তখন কী হয়?

Reporter: নিজস্ব সংবাদদাতা | লেখক: ডঃ বিশ্বনাথ এস ২০ মার্চ ২০২৫ ১৮ : ৪৬Akash Debnath


ডঃ বিশ্বনাথ এস (এইচওডি এবং কনসালটেন্ট - নেফ্রোলজি, ট্রান্সপ্ল্যান্ট ফিজিশিয়ান, মণিপাল হাসপাতাল ওল্ড এয়ারপোর্ট রোড): 

“আমরা, কিডনিরা, আমরা আমাদের কাজের কোনও স্বীকৃতি পাই না, বছরের পর বছর ধরে আমাদের কোনও সুরক্ষা পাই না অথচ আমাদের উপর আঘাত এবং অপব্যবহারের চাপ আসতেই থাকে। এই চাপ সহ্য করতে আমরা অক্ষম, তাই আমরা কিডনিরা "আপনার ফিল্টারিং সিস্টেম"  পদ থেকে পদত্যাগ করছি।”

কিডনি হল শরীরের ফিল্টারিং সিস্টেম, যা অক্লান্তভাবে রক্ত ​​থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল ফিল্টার করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে। তবে, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাসের মতো জীবনযাত্রার কারণে বছরের পর বছর ধরে কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে এবং তাদের ক্ষমতা হারাতে পারে। এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ) এবং কিডনি ফেইলিয়রের মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে - যে অবস্থা থেকে আর ফিরে আসার উপায় থাকে না।

এই বছরের বিশ্ব কিডনি দিবসে, মণিপাল হাসপাতাল "কিডনির পদত্যাগ" শব্দ বন্ধের মাধ্যমে একটি বার্তা দিতে চেয়েছে -এটি এমন একটি উদ্যোগ যার লক্ষ্য কিডনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে আলোচনা করা এবং অনেক দেরি হওয়ার আগে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে রক্ষা করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ করতে মানুষকে উৎসাহিত করা।

ভারতে কিডনির রোগের প্রাদুর্ভাব: ভারতে, ডায়াবেটিসের মতো রোগের কারণে, ইতিমধ্যেই একটা বড় সংখ্যক মানুষের কিডনি এমন চাপে রয়েছে যে, তাঁদের কার্যকালের মেয়াদ প্রায় শেষ। উদাহরণস্বরূপ, ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ১০-২০% ব্যক্তি কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং ১০% কিডনি ফেইলিয়রের সম্মুখীন হতে পারেন। কাজেই এখানে আগে থেকে রোগ চিহ্নিত করা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া সবচেয়ে জরুরি। সময় মতো সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা গেলে আগে থেকেই চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে এবং কিডনিগুলিকে রক্ষা করা যেতে পারে। 

কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ: কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি এতোটাই গৌণ যে এবং রোগটি এগিয়ে না অনেকেই রোগ বেড়ে যাওয়া পর্যন্ত সেগুলি উপেক্ষা করেন। কিডনি ৯০% এরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলে অর্থাৎ কিডনি কাজ করা প্রায় বন্ধ করে দেওয়ার পর প্রধান লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে শুরু করে। বিজ্ঞানের ভাষায়, এটি সেই পর্যায় যখন গ্লোমেরুলার ফিল্টারেশন রেট ১০ মিলি/মিনিটের নিচে নেমে যায়। এই পর্যায়ে যে লক্ষণগুলি গুরুতর হয়ে ওঠে, তার মধ্যে রয়েছে ক্ষুধামান্দ্য, শ্বাসকষ্ট, চরম ক্লান্তি, শরীরে তরলের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া এবং স্বাভাবিক শারীরিক কার্যকারিতা বজায় রাখার অক্ষমতা।

এই অবস্থায় শরীরে টক্সিন জমা হয়, যার ফলে হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, স্ট্রোক ইত্যাদির ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া-সহ বেশ কিছু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেয়। এই অবস্থায় আর ফিরে আসার পথ থাকে না - কারণ ইতিমধ্যেই কিডনি সম্পূর্ণরূপে খারাপ হয়ে গেছে। চিকিৎসার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায় ডায়ালিসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন (রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি)।

কিডনির যত্ন নেওয়া: কিডনিকে সর্বোত্তম ক্ষমতার সঙ্গে কাজ করতে সাহায্য করার জন্য, আপনাকে অবশ্যই তাদের যত্ন নিতে হবে। ধূমপানের মতো ক্ষতিকারক অভ্যাসগুলি এড়িয়ে চলুন যা কিডনির স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। একইভাবে, তামাক চিবানো বা যে কোনও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করাও সমানভাবে ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করাও এড়িয়ে চলা উচিত।

যদি আপনার দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো অসুখের কারণে কিডনির রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়ম করে শারীরিক পরীক্ষা করান। কিডনির রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে নিয়মিত ক্রিয়েটিনিন, প্রস্রাব প্রোটিন এবং প্রস্রাব অ্যালবুমিনের মতো পরীক্ষা করে আপনার কিডনির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করুন। যদি আপনার ওজন বেশি হয়, তাহলে আপনার ওজন কমাতে হবে, পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত লবণ এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। এগুলি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতাকে বাড়িয়ে তোলে।

অনেকেই ব্যথা কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই দোকান থেকে সরাসরি পেইন কিলার কিনে খেয়ে নেন। এই ভাবে মুঠো মুঠো পেইনকিলার খাওয়া কিডনির পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। এগুলো ব্যবহারের আগে সতর্ক থাকুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। জলশূন্যতার ঝুঁকি এড়াতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করুন। এই পন্থাগুলি অনুসরণ করলে, আমরা আমাদের কিডনিকে সুস্থ রাখতে পারি। কাজেই আজই আপনার কিডনি রক্ষা করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নিন, কারণ একবার কিডনি বন্ধ হয়ে গেলে, আর পিছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই!


World Kidney DayManipal Hospitalkidney diseases

নানান খবর

সোশ্যাল মিডিয়া